- প্যারাসিটামল কাজ করতে এক ঘন্টার মত সময় লাগে।
- সাধারণ ডোজ হচ্ছে ২৪ ঘন্টায় ৫০০ মিঃ গ্রাঃ এর একটি বা দুটি ট্যাবলেট ৪ বার নেয়া যায়। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮টি ট্যাবলেট নেয়া যাবে।
- প্যারাসিটামলের সাথে প্যারাসিটামল আছে এমন অন্য ওষুধ নেয়া যাবে না কারন এতে ওভারডোজের সম্ভাবনা থাকে।
- প্যারাসিটামল গর্ভকালীন ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সাধারণ ডোজে নিরাপদ।
কারা খেতে পারবেন ও কারা পারবেন নাঃ
সাধারণত ১৬ বছর এবং এর বেশি বয়সের সবাই প্যরাসিটামল খেতে পারে। এটা গর্ভকালীন ও বুকের দুধ খাওয়ায় এমন মায়েদের জন্যেও নিরাপদ।
যারা নিতে পারবেন নাঃ এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন –
- যাদের লিভার অথবা কিডনিতে সমস্যা আছে।
- যাদের কখনো প্যারাসিটামল বা অন্য কোনো ওষুধে এলার্জিক রিএকশন হয়েছে।
- যারা নিয়মিত সর্বোচ্চ নির্ধারিত পরিমাণ ( প্রতি সপ্তাহে ১৪ ইউনিট) এর বেশি মদপান করে ।
তবে কারো ওজন যদি ৫০ কেজির থেকে কম হয় তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন কারন এক্ষেত্রে তার সাধারন ডোজের কম লাগতে পারে।
কিভাবে ও কখন নিবেনঃ
প্যারাসিটামল সাধারনত ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়।
১ ট্যাবলেট = ৫০০ মিঃ গ্রাঃ অথবা ১ গ্রাম।
সিরাপ ( মুখে খাওয়ার তরল)= ১২০/ ২৫০/ ৫০০ মিঃ গ্রাঃ থাকে ৫ মিলির মধ্যে ।
সাপোজিটরি ( পায়ুপথে বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে দেয়া হয়) = ১২৫/ ২৫০/ ৫০০ মিঃগ্রাঃ বা ১ গ্রাম।
প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারন ডোজ হচ্ছে ৫০০ মিঃগ্রাঃ বা ১ গ্রাম।
মনে রাখতে হবে যে, প্রাপ্তবয়স্করা ২৪ ঘণ্টায় ২টা ৫০০ মি;গ্রাঃ এর ট্যাবলেট একসাথে ৪ বার নিতে পারবেন। প্রত্যেক ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ৪ ঘন্টার গ্যাপ দিতে হবে। ২৪ ঘন্টায় ৫০০ মিঃগ্রাঃ ট্যাবলেট ৮টার বেশি নেয়া যাবে না।
ট্যাবলেট – পানি দিয়ে খেতে হয়। খাওয়ার আগে অথবা পরে খাওয়া যায়।
সিরাপ- সিরাপ সাধারনত বোতলে থাকে এবং এর সাথে মাপার জন্যে ক্যাপ বা চামচ থাকে। এক্ষেত্রে মাপার জন্যে রান্নার নরমাল চামচ ব্যবহার করা যাবে না । এতে পরিমাপ ভুল হতে পারে। ওষুধের প্যাকেটে আরো তথ্য লেখা থাকে।
সাপোজিটরি – হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। আপনার সুবিধামত শুয়ে অথবা বসে থাকতে পারেন। সাপোজিটরির প্যাকেট খুলে পায়ুপথে চোখা অংশ টা আগে ঢুকাতে হবে। আস্তে করে ১ ইঞ্চি বা ৩ সেঃমিঃ এর মতো ভিতরে ঢুকাতে হবে। যে অবস্থায় সাপোজিটরি ঢুকিয়েছেন সেই ভাবে ১৫ মিনিট থাকুন। হাত পরিষ্কার করে নিন। সাপোজিটরি পায়ুপথের মধ্যে গলে যাবে।
কতদিন নিতে হবেঃ
- যদি অল্প সময়ের ব্যথা যেমন, মাথা ব্যথা র জন্যে নিয়ে থাকেন, তবে সাধারনত একদিন বা দুইদিন নিতে হতে পারে।
- যদি দীর্ঘ সময়ের কোনো সমস্যার জন্যে নিয়ে থাকেন, তবে অনেকদিন নিতে হতে পারে।
- যদি আপনি আপনার জন্যে নির্ধারিত ডোজে প্যারাসিটামল নিয়ে থাকেন তো দীর্ঘ সময় প্যারাসিটামল নেয়া আপনার জন্যে নিরাপদ।
যদি আপনি নিয়মিত প্যারাসিটামল নিয়মিত খান ও কোনো ডোজ ভুলে যান, তাহলে যখন মনে পরবে তখন নিতে পারবেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে, আপনার যখন মনে পরেছে সেই সময় থেকে পরবর্তী নির্ধারিত ডোজের সময়ের পার্থক্য ৪ ঘন্টার কম হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে শুধু পরবর্তী নির্ধারিত ডোজ নিবেন। ভুলে যাওয়ার জন্যে কোনো অতিরিক্ত ডোজ নেয়া যাবে না। অতিরিক্ত প্যারাসিটামল আপনার লিভারের ক্ষতির কারণ হবে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
সঠিক ডোজে প্যারাসিটামল নিলে পার্শ্ব পতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। প্যারাসিটামল থেকে এলার্জিক রিএকশন এর সম্ভাবনা খুবই কম। এরকম হলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়ঃ
- হঠাৎ করে ঠোট, মুখ, গলা অথবা জিহ্বা ফুলে যাওয়া।
- শ্বাস দ্রুত নেয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া , শ্বাস নেয়ার সময় বাঁশির মতো আওয়াজ হওয়া ।
- গলায় কিছু চেপে আছে বা ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া ।
- শরীরের ত্বক , জিহ্বা বা ঠোঁট নীল বা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
- হঠাৎ অবচেতন হয়ে যাওয়া ।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ।
- চামড়ায় ফুসকুড়ি বা র্যাশ হওয়া ।
এমন হলে সাথে সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
প্যারাসিটামল ও গর্ভবতী মাঃ
প্যারাসিটামল গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে নিরাপদ ও প্রধান ব্যথানাশক ওষুধ।
প্যারাসিটামল ও বুকের দুধ খাওয়ানো মাঃ
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সাধারণ ডোজে প্যরাসিটামল খাওয়া যাবে। এসব মায়েদের জন্যেও এটা প্রধান ব্যথানাশক। এটা বুকের দুধের সাথে খুবই অল্প পরিমানে বাচ্চার শরীরে যায় যা বাচ্চার কোনো ক্ষতির কারণ হয় না।
এটা অন্যান্য ব্যথানাশক যেমন, আইবুপ্রফেন এসবের সাথেও নেয়া যাবে। তবে এমন কোনো ব্যথানাশক বা ওষুধের সাথে নেয়া যাবে না যেটাতে প্যারাসিটামল আছে কারণ এতে ওভারডোজের সম্ভাবনা থাকে।
প্যারাসিটামল ও গর্ভধারণের ক্ষমতাঃ
এমন কোনো তথ্য নেই যা প্রমাণ করে যে প্যারাসিটামল পুরুষ ও মহিলাদের গর্ভধারণ বা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
প্যারাসিটামলের সাথে অন্যান্য ওষুধের রিএকশনঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্যারাসিটামল সব ওষুধের সাথে নেয়া যায়। তবে আপনি যদি ওয়ারফারিন ( WARFARIN) খেয়ে থাকেন ( এক্ষেত্রে আপনার ব্লিডিং এর সম্ভাবনা বেড়ে যায় নিয়মিত প্যারাসিটামল খেলে), এপিলেপ্সির জন্যে ওষুধ, টিবি বা যক্ষ্মার ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে প্যারাসিটামল নেয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎ্সকের পরামর্শ নিবেন।এমন কোনো ব্যথানাশক বা ওষুধের সাথে নেয়া যাবে না যেটাতে প্যারাসিটামল আছে কারণ এতে ওভারডোজের সম্ভাবনা থাকে। প্যারাসিটামল সাপ্লিমেন্ট বা হারবাল ওষুধের সাথে কোনো রিএকশন করে কিনা এই বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। সাধারণ ভাবে দেখা যায় যে, প্যারাসিটামল এসব ওষুধের সাথে রিএকশন করে না।
সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ
- প্যারাসিটামল কিভাবে কাজ করে?
প্যারাসিটামল ব্রেইনের যে ক্যামিকেল মেসেঞ্জার আমাদেরকে বুঝায় যে আমাদের শরীরে ব্যথা আছে তাকে বন্ধ করার মাধ্যমে কাজ করে। একইভাবে ব্রেইনের যে অংশ আমাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে কাজ করে আমাদের উচ্চ তাপমাত্রা কমায়।
- প্যরাসিটামল কাজ করতে কতক্ষণ লাগে?
প্যারাসিটামল কাজ করতে ১ ঘণ্টার মতো সময় লাগে ও এটা ৫ ঘণ্টা ধরে কাজ করে।
- কোনো দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কি?
নির্ধারিত ডোজের বেশি না খেলে এটা নিয়মিত দীর্ঘ মেয়াদে খেলেও কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া করে না।
- প্যারাসিটামল অন্যান্য ব্যথানাশকের সাথে কিভাবে তুলনীয়?
আপনার প্যারাসিটামল লাগবে নাকি অন্য ব্যথানাশক লাগবে তা আপনার ব্যথার ধরনের উপর নির্ভর করে। এটা সাধারনত মাথা ব্যথা, পেট ব্যথায় ভালো কাজ করে। তবে আপনার প্যারাসিটামলে কাজ না করলে আপনি অন্য ব্যথানাশক নিতে পারেন।
- এটা কি আমার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে?
প্যারাসিটামল পিল, ইমারজেন্সী পিল সহ কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলে না।
- আমার কি কোনো খাবার বা পানীয় বাদ দিতে হবে?
না। আপনি স্বাভাবিক ভাবে সব খেতে ও পান করতে পারবেন। প্যারাসিটামল খালি পেটেও খাওয়া যাবে।